
আর কতক্ষণ লাগবে?”
“এ-ই তো, বের হচ্ছি।”
রফিক জানে, এই বের হওয়াটা কমপক্ষে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে। সীমা রোমান্টিক মুভি দেখতে খুবই পছন্দ করে। তা-ই প্রায়সই তাদের রোমান্টিক মুভি দেখতে যেতে হয়। রফিকের এসব রোমান্টিক মুভি ভালো লাগে না। তার খুবই বিব্রতকর লাগে। বিশেষ করে ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত গুলো তার দেখতেই ইচ্ছে করে না। সীমা আগ্রহ নিয়ে এসব দেখে। সীমা রফিকের বিয়ে প্রায় ১ বছর হতে চললো। সীমা খুবই চঞ্চল ও আবেগপ্রবণ মেয়ে, তাদের বিয়ের মোটামুটি এক বছর হতে চললো। এরই মধ্যে মেয়ে রফিককে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। রফিকের কোনটা ভালো লাগে কোনটা মন্দ লাগে সবকিছু সে দেখেশুনে রাখে। রফিকের কোনো অসুখ হলে তো কথাই নাই। সীমার শারীরিক চাহিদাও অনেক, রফিককে জড়িয়ে ধরে থাকতে থাকতে, নিজেই রফিকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। রফিকের এসব এত ভালো লাগে না। যদিও জড়িয়ে ধরে থাকাটা রফিকের ভালো লাগে৷ দুজনের হৃৎস্পন্দন একই লয়ে মেতে উঠছে যেন। অনেক মায়া লাগে তখন। কিন্তু, সীমা তো ঐখানে থেমে থাকে না। তার হাত বিচরণ করতে থাকে নিচের দিকে।
তখন ইচ্ছে না থাকলেও সাড়া দিতে হয়।
“এই এই, বসে বসে কি ভাবছো? উঠো মুভি দেখতে যেতে হবে!”
কতক্ষণ বসে বসে এসব ভাবছিলো রফিক আন্দাজ করতে পারে না। সীমা বের হয়েছে তারমানে আধঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, এটা বুঝতে পারে রফিক।
দুজনে রিকশায় উঠে রওনা হয়। সীমা ইতিমধ্যে তার কাঁধে মাথা রেখে, ওর হাতের মধ্যে হাত গলিয়ে বসে আছে।
মুভি শুরুর ২০ মিনিট পর তারা প্রবেশ করলো। মুভিটি খুবই সুন্দর, অন্তত সীমার তা-ই ধারণা। কিছু জায়গায় আবেগে কেঁদেও দিলো সীমা।।
“দেখেছো, কত সুন্দর তারা একে অপরকে আদর করছে। তুমি আমাকে ওমন করো না কেন?”
অভিমানী সুরে বলে সীমা। রফিক তার গালে একটি চুম্বন করে৷ তারপর বলে, কে বললো করি না। এই যে কত ভালেবাসি তোমায়। সীমা, কথা বাড়ায় না।
রফিক রোমান্টিক দৃশ্য দেখতে দেখতে, আবার উদাস হয়ে পড়ে। আচ্ছা এমন কেন?
পরিশুদ্ধ প্লেটোনিক ভালোবাসা কি হয় না?
সবকিছুতেই কেন শরীর প্রয়োজন? মনের কি দাম নাই? এই জেনারেশনে শরীর যেন ভালোবাসার জন্য একদম ই মূখ্য বিষয়। আগের দিনের সেই চিঠির যুগই খুবই ভালো ছিলো৷
……………….
“Life isn’t about waiting for the storm to pass; it’s about learning to dance in the rain and finding joy in the midst of life’s challenges.”
Vivian Greene
“ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে, আমার নামটি লিখো, তোমার মনের মন্দিরে….”
বারান্দায় এই গানটি বাজিয়ে গুনগুন করে গাচ্ছিল রাজিব। হাতে সকালে আসা গরম খবরের কাগজ আর হাতে কফি। সকালটা বেশ লাগে রাজিবের। কাল রাতে শারমিনকে খুবই সুন্দর ভাবে আদর করেছে সে৷ তাই মনটা খুবই ভালো। আদরের মাঝেই মনে হয়েছে, শারমিন একটু বেখেয়ালি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, রাজিব বিষয়টাতে এত পাত্তা দেয় না। কারণ, জানে মেয়েদের মাথায় অনেকিছু চলতে থাকে। আর শারমিন তো তাকে না-ও করে না৷ তাই আর কোনো সমস্যা হয় নি। শারমিন গোসল করে বের হয়৷ শারমিনের দিকে তাকিয়ে আবার আদর করতে ইচ্ছে হয়৷ কি সুন্দর লাগছে। ভিজে চুল টপটপ করে পড়ছে। যেন মুক্তো ঝরছে। সৃষ্টি কর্তা কত রূপ দিয়ে তৈরি করেছে মেয়েদের। সে এগিয়ে যায়।
প্লে লিস্টে বাজতে থাকে, তাহসানের স্পর্শের বাইরে গানটি৷ এই গানের সুরে সে হাত বাড়িয়ে দেয়৷ শারমিন ও হাত বাড়ায়। দুজনে একটু কাপল ডান্স করে নেয়। শারমিন নাচের মাঝখানেই একটু আনমনা হয়ে যায়। রাজিব তাকে খুবই ভালোবাসে কিন্তু এরমধ্যে দেহটাই মাঝেমধ্যে প্রধান মনে হয় তারও। এই যে গান বাজছে, প্রচ্ছন্ন শারীরিক চাহিদার ইঙ্গিত, সাথে বিরহের ছটা ছিল ছিটিয়ে দিয়েছেন গায়ক। ইদানীং সময়ে কিছুতেই শারীরিক চাহিদার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। রাজিব আদর করতে পারলে, তাকে পুরো দুনিয়া এনে দেয় এমন আচরণ করে। কিন্তু যদি সপ্তাখানেক আদর করতে না দেয়। খিটমিটে আচরণ শুরু হয়ে যায়। আজ ছুটির দিন, রাজিব, চায়, তারা রোমান্টিক কিছু বই রিডিং করে শোনাবে। শারমিনের এগুলো খুবই ভালো লাগে৷ কিন্তু, রাজিব আজ যে বইটি সিলেক্ট করেছে এটি দেখেই গা গুলিয়ে উঠে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হওয়া জয়ল্যান্ড বই। এই বই সম্পর্কে শুনেছে শারমিন। উদ্দাম যৌনতা ভরা বই। সে ভাবে, মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায়, তার নিজের মতো লেখা গল্প পেলো না৷ প্লেটোনিক ভালোবাসার কেন এত মর্যাদা কম?
কারণটাও জানে সে, অধিকাংশ মানুষ ই যৌনতা পছন্দ করে।
সে রাতে রফিক এবং শারমিন দুজনেই আবারো যেতে হয় তাদের “অনিচ্ছার শহরে।”
সুখের পর, তৃপ্তির সাথে ঘুমাচ্ছিলো দুই দম্পতির ই দুজন মানুষ। আর বাকি দুজন, হাতে কফি নিয়ে এসে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আকাশে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ, জ্বলজ্বল করছে। সে দিকে তাকিয়ে, দুজনের মধ্যে ই প্রশ্ন জাগে? আমি কি আসলেই একা???
দীর্ঘশ্বাস ফেলে,দুজনেই ফোনে হাত রাখে। ইন্টারনেটে খুঁজতে শুরু করলো , নিজের এই অবস্থার কোনো কূলকিনারা পাওয়া যায় কি না…
সেই রাতে দুজনেই, নিজেদের নতুনভাবে আবিষ্কার করলো। না এ কোনো সমস্যা বা রোগ নয়। এটি জন্মগত এবং সম্পূর্ণ বাস্তব। ওরা দুজন মূলত হেটারো-রোমান্টিক এসেক্সুয়াল। অন্য লিঙ্গের মানুষের সাথে তারা রোমান্টিক সম্পর্কে খুবই সাচ্ছন্দ্য অনুভব করে৷ কিন্তু সেক্সুয়ালি জড়াতে তাদের অনীহা। সম্পূর্ণ নতুন এক জগৎ খুলে গেলো যেন তাদের জন্য। তার আবিষ্কার করলো, এইস মানুষদের জন্য আলাদা প্লাটফর্ম আছে, ডেটিং অ্যাপ আছে, কমিউনিটি আছে। তার দুজনেই ইচ্ছে করলো, নিজেদের মতো মানুষদের সাথে মিশবে, অনুভূতি শেয়ার করবে। জানতে পারবে আরো ভালো করে।
এইসদের ডেটিং অ্যাপ ACEapp- Asexual Social Network, এ দুজনেই একই সময়ে, নিজেদের নামে প্রোফাইল তৈরি করেছে। কিন্তু দুজনের কেউই জানতো না, যে, তাদের জীবন নতুন একটা মোড় নিতে চলেছে। নিজে যা পছন্দ করে তা নিজের বায়োতে লিখলো। অ্যাপটি চালানো খুবই সহজ। আর যে রকম ওরিয়েন্টেশন পছন্দ সেই অনুযায়ী মানুষ জনই আসে৷ কয়েকজনের সাথে পরিচয়ের চেষ্টার পর।
দুজনের পরিচয় হয় অ্যাপে। দুজন একই দেশের দুই জেলার বাসিন্দা। শেয়ার করে নিজেদের সুখ দুঃখের কথা। শারমিন রফিককে যেন নিজের আয়নায় দেখতে পায়। ভেবেই পায় না, একই দেশের আকাশ দুজনেই শেয়ার করেছে, অথচ কেউ কাউকে জানতো না। এখন কতটা আপন লাগছে নিজেদের।
মাসখানেক পর, রফিক এবং শারমিনের সম্পর্ক অনেক বেশিই গভীর হতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারে, যা করছে, তা ঠিক নয়৷ কিন্তু, তাদের নিজেদের মধ্যে যে স্বতন্ত্রভাব পেয়েছে। কেউ একজন পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে,সেটার মায়া কাটানোও তো সহজ নয়।
ওরা নিজেদের মধ্যে স্বপ্ন আঁকতে থাকে। কিন্তু, পরমুহূর্তেই মনে হয়, নিজেদের সংসার আছে, যদিও এখনো সন্তানাদি হয়নি। কিন্তু, তাও, সমাজ সংসারের পিছুটান অনেক বড় বিষয়। রফিক একটি প্রস্তাব করে শারমিন কে। শারমিনের চোখ চকচক করে উঠে।
গাজীপুরের মেঘবাড়ি রিসোর্টে, ছোট্টখাটো আয়োজন। দুই দম্পতি। কিন্তু দুজন মানুষ জানে না কিছু ই।
সামনে কেক আসে। কেকটিতে এইস ফ্ল্যাগের ডিজাইন।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রাজিব ও সীমা। কি চলছে এখানে, রফিক বলে, আগে কেক কাটি সবাই মিলে, তারপর বলছি। কেক কাটা হলো, খাওয়া দাওয়া হলো। তারপর, শারমিন প্রথম মুখ খুললো। সবটা বললো একদম শুরু থেকে। তারপর রফিকও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলো। রাজিব ও সীমা ভালোরকম অবাক হয়েছে। তারা জানতোও না অরিয়েন্টেশন বলে কিছু আছে। আর এইস বা এরকম মানুষ হয় সেটা তাদের চিন্তারও বাইরে। রাজিব বললো, “ আমি তোমাকে চাইলে, ডাক্তার দেখাতে পারি, কিন্তু তুমি এত সহজেই সংসার ছেড়ে দিচ্ছো কেন?”
শারমিন বললো,” আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি। জানতে পেরেছি অনেক কিছু, সত্যি বলতে আমি অভিনয় করতে করতে কাহিল হয়ে পড়েছি। আমার দ্বারা আর সম্ভব না, বিশ্বাস করো। আর আমি চাই না তোমার প্রতি অন্যায় হোক।”
রাজিব,” আমি খেয়াল করেছি, সেক্স করার সময় তুমি মাঝেমধ্যে আনমনা হয়ে যাও,কিন্তু এইটা যে কারণ তা তো বুঝি নি।”
Blog Excerpts
অপরদিকে, সীমা কান্নায় ভেঙে পড়লো, “ তোমার পেনিসে তো কোনো সমস্যা নেই৷ তুমি তো অনেক সময় নিয়ে আমাকে সুখ দাও। তাও কেন?? তুমি কি বলতে চাও, আমি সুন্দরী না? আমাকে আর ভালো লাগে না তোমার?”
রফিক, “দেখো, তুমি অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়ে। এটায় কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু, আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা করো। আমি এতদিন তোমার সাথে সম্পর্ক করেছি কিন্তু ঐগুলো আসলে অভিনয় ছিলো। আমার মন থেকে চাওয়া নয়।”
সীমা ও রাজিব তখন একসাথে বললো, কিন্তু এইখানে আমাদের দুই পরিবারকে একসাথে নিয়ে আসার কারণ কি? তোমরা দুজন দুজনকে চেনো?!
তোমাদের মধ্যে কি ধরণের সম্পর্ক, তা বলো আমাদের।
তোমরা তো তাহলে পরকীয়া করেছো।।
রফিক বললো,”থামো থামো সব বলছি। আমরা পরকীয়া করেছি বলতে বিষয়টা যেরকম নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছো ওরকম নয়। আমরা দুজন দুজনের মধ্যে একান্তই মিল খুঁজে পেয়েছি। কথা বলেছি। তখন মনে হয়েছে, নিজের ভিতরকার জমানো ব্যথা, কষ্ট ও দীর্ঘশ্বাস অপরজনের মতোই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা দুজন একসাথে বাকিটা জীবন কাটাবো৷ এত অমঙ্গল বা খারাপ কিছু দেখছি না, এটা আমাদের দুজনের জন্য যেমন ভালো তোমাদের জন্য ও ভালো। তোমরা দুজনে চাইলে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করতে পারো। আর ওমন তো নয় যে আমরা গোপনে গোপনে অনেকদিন ধরে সম্পর্কে আছি। তোমাদের সাথে প্রতারণা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমাদের ছিলো না, বিশ্বাস করো, তা-ই আমি আজ আমাদের চারজনকে ডেকেছি, যেন মীমাংসায় পৌঁছতে পারি।”
তারপরও রাজিব ও সীমা অনেকক্ষণ তাদের জেরা করলো এটি নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত, দুজন সকল বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে। একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারলো। দুজনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার পথে ওরা প্রথমেই একটি ট্যুরে যেতে চাইলো, কক্সবাজারে।
সন্ধ্যার বালুতীর। বালির পাশে দুজন বসলো পাশাপাশি। সামনে উজ্জল সূর্যালোক। শারমিন আস্তে করে রফিকের কাঁধে মাথা রাখলো। তার চোখ বেয়ে আবারও জল গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু সে জল দুঃখের নয়, আনন্দের। রাজিব ও শারমিন, দুজনের হাতে এখন অনেক কাজ। তাদের ইচ্ছে৷ নিজেদের মতো এমন মানুষদের সাথে নিয়ে একটি কমিউনিটি তৈরি করবে৷ এটি নিয়ে চেষ্টা করবে গণসচেতনতা বাড়াতে। সাথে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায়ও কাজ করতে, যেন সবাই বুঝতে পারে। ভালোবাসা মানেই অবাধ যৌনতা নয়৷ যৌনতার শহরে, ক্ষুদ্র একটি প্লেটোনিক ভালোবাসার স্বপ্ন নিয়ে যারা বাঁচতে চায়। তাদের সেইভাবে বাঁচতে দেওয়া উচিৎ।।
I love how your posts are always so well-structured and easy to follow. Keep it up!
I\’m impressed by your writing style and the depth of your knowledge on this topic.
Thank you! I\’m thrilled that you found the post valuable. Your support means a lot.
I\’m so glad I found your site. Your posts are consistently excellent.